নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্ব যখন উদগ্রীব ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাস্থ্যসম্মত (অর্গানিক) ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেলেন চট্টগ্রামের ফখরুল ইসলাম। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি মাদরাসায় অধ্যাপনার পাশাপাশি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে হোমিও ও হার্বাল মেডিসিন এবং জৈব বালাই নাশক ও খাদ্য (স্বাস্থ্যসম্মত) প্রয়োগ করে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে এ স্বীকৃতি পেলেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিজ্ঞানীর পেটেন্টের পাশে ফখরুলের স্বাস্থসম্মত ডিম ও মুরগির পেটেন্ট ও স্থান করে নিয়েছে।
বাংলাদেশ পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেড মার্ক অধিদফতর কর্তৃক ১০০৫৬০১ নং স্মারক মূলে বিশ্বে প্রথমবারের মতো তার অর্গানিক (স্বাস্থ্যসম্মত) মুরগি ও মুরগির ডিম উৎপাদনের পেটেন্ট অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এর আগে ফখরুলের রহমানিয়া অ্যাগ্রোতে উৎপাদিত স্বাস্থ্যসম্মত ডিম ও মুরগিকে দেশের সর্বোচ্চ তিনটি গুণগত মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত বলে স্বীকৃতির সনদ দিয়েছেন। সম্পূর্ণ হারবাল খাবার ও হোমিও ওষুধ প্রয়োগ করে ফখরুল ইসলাম বিশ্বে সর্বপ্রথম স্বাস্থ্যসম্মত ডিম ও মুরগি উৎপাদনে সফল হয়েছেন।
ফলে বাংলাদেশ পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেড মার্ক অধিদফতর কর্তৃক ১০০৫৬০১ নং স্মারকমূলে বিশ্বে প্রথমবারের মতো তার অর্গানিক (স্বাস্থ্যসম্মত) মুরগি ও মুরগির ডিম উৎপাদনের ওপর বাংলাদেশ সরকার তার পেটেন্ট অনুমোদন দিয়েছে।
স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশবান্ধব উপায়ে অর্গানিক পোলট্রি ও ডেইরি উদ্যোক্তা ফখরুল ইসলাম তার উদ্ভাবিত নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত প্রোটিনসমৃদ্ধ মুরগি ও ডিম পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চান। তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক, কোলেস্টেরল, ক্রোমিয়াম, কোরামফেনিকল, কৃত্রিম হরমোন ও সিসা প্রাণী ও মানবদেহের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। তার উদ্ভাবিত মুরগি ও মুরগির ডিম এসব বিষাক্ত কেমিক্যালমুক্ত। ফলে তার ডিম ও মরগি স্বাস্থ্যসম্মত ও সম্পূর্ণ নিরাপদ।
ফখরুল বলেন, বাজারে প্রাপ্ত ডিম ও মুরগির গোল্ড মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক, ক্রোমিয়াম, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, সিসা, কোরামফেনিকল, স্টরয়েড রয়েছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য খুব মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এর ফলে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। এসব খেয়ে আমাদের শরীরে এখন টক্সিন, রিউমেটিক ফিভার, পচন, ডায়াবেটিস, চর্ম, হৃদরোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া কোলেস্টেরল বৃদ্ধিও পাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাজারে দুই ধরনের কেমিক্যাল পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে সিনথেটিক অপরটি প্রাকৃতিক বা জৈব কেমিক্যাল। জৈব কেমিক্যাল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অপর দিকে সিনথেটিক কেমিক্যালস মানবদেহে ৯৫ ভাগ শোষিত হয় না।
তিনি জানান, তার ফার্মে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগিকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত হারবাল খাবার ও হোমিও মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। এর ফলে ডিম ও মুরগি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে রূপান্তরিত হয়।
পোলট্রি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার কর্তৃক রহমানিয়া অ্যাগ্রোর উৎপাদিত ডিম ও মুরগি পরীক্ষা করে তাতে অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি সনদ প্রদান করে। পরে বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণাগার ঢাকা কর্তৃক উৎপাদিত ডিম ও মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক কোলেস্টেরল, ক্রোমিয়ামমুক্ত সনদ প্রদান করে। সর্বশেষ খাদ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট (আইএফএসটি) কর্তৃক স্ট্ররয়েড, কোরামফেনিকল, সিসা ও ক্রোমিয়াম পরীক্ষা করে এসব উৎপাদানমুক্ত বলে সনদ দিয়েছেন।
অর্গানিক (স্বাস্থ্যসম্মত) ডিম ও মুরগি উৎপাদনের একমাত্র উদ্যোক্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত মুরগি ও ডিম বাজারজাতকরণের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণাগারের (বিসিএসআইআর) গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের প্রকল্প পরিচালক মালা খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোঃ তফাজ্জল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইনকেয়াজ উদ্দিন উদ্ভাবন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। পরে ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেডিং সেন্টারে অর্গানিক ডিমের রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে নিয়ে সেখানকার বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেন, ফখরুলের উৎপাদিত মুরগির ডিম সত্যিই অর্গানিক ও স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ।
ফখরুল বলেন, ‘১৮ বছর আগে অর্গানিক পদ্ধতির ডিম ও মুরগি উৎপাদনে মনোযোগী হই। আর ২০১০ সালের দিকে প্রথম সাফল্য পাই। তখন নিজের উদ্যোগে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হই যে আমার খামারে উৎপাদিত ডিম ও মুরগি অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত। পরে সরকারি পরীক্ষাগার তথা খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণাগার এবং চট্টগ্রামে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। সরকারি পরীক্ষাগারেও অভিন্ন ফল আসায় শতভাগ নিশ্চিত হই যে সত্যিকারভাবেই আমি অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত ডিম ও মুরগি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।’
No comments:
Post a Comment