নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে নোয়াম চমস্কির সাক্ষাৎকার
'মানুষ আমেরিকা ইউরোপে আসছে কারণ তাদের সমাজ আমরাই ধ্বংস করেছি'
দার্শনিক, ভাষাতত্ত্ববিদ, সমাজ সমালোচক নোয়াম চমস্কি নতুন বিশ্বব্যবস্থা সম্পর্কে বলে আসছেন অনেক দিন ধরে। সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদের তৎপরতা নিয়ে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন ব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন। চমস্কির মতে, সমাজ সংস্কৃতি, গণআন্দোলন, অর্থনৈতিক নিরীক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলোর মধ্যে সংযোগ রয়েছে। নয়া ব্যবস্থা সে সংযোগকে স্পষ্ট এবং শক্তিশালী করবে। এদের মধ্যকার রসায়নকে আরো ভালোভাবে বিশ্লেষিত করবে, যা সবার ভাবনার দৌড়ের চেয়েও অনেকটা দ্রুততর। চমস্কি সম্প্রতি Next System
Project এর সাথে এ ব্যাপারে বিস্তৃত এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য কিছুটা সংক্ষিপ্তভাবে সাক্ষাৎকারটির তুলে ধরেছেন সুমাইয়া হাবীবা
প্রশ্ন: আপনি ঠিক এ সময়টাতেই কেন ভাবছেন যে সমাজে অর্থনীতি রাজনীতির ব্যাপক অবনমন ঘটেছে। সমাজে ভালোকিছুর চেয়ে মন্দটাই বেশি হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য কোন বিষয়ে জোর দেয়া দরকার বলে ভাবছেন?
নোয়াম চমস্কি : এর উত্তর পেতে হলে আমাদের একটু সুদূর অতীতে ফিরে যেতে হবে। তিরিশের দশকের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে যাওয়া যাক। আপনি যদি আজকের সাথে সে সময়ের তুলনা করেন,
দেখবেন সম্পূর্ণই ভিন্ন অবস্থা ছিল তখন। আমি খুব ভালোভাবেই সে পুরনো স্মৃতি স্মরণ করতে পারি। সামগ্রিকভাবে সে সময়টা আজকের তুলনায় অনেক বেশি খারাপ ছিল। কিন্তু আরেক দিকে চিন্তা করলে অনেক বেশি ভালোও ছিল। এটা খুবই আশাবাদী অধ্যায় ছিল। অন্তত আমার নিজের বিশাল পরিবারে তা দেখেছি। সে সময়ে কর্মজীবীদের বেশির ভাগই ছিল বেকার। পড়াশোনার হার খুব কম। এমনকি হাইস্কুলের দৌড়ও নয়। তা সত্ত্বেও তারা ছিল কর্মঠ, সক্রিয়, সংগঠিত এবং আশাবাদী। সেখানে চলছিল শ্রম-অধিকার সংগ্রাম।নোয়াম চমস্কি : এর উত্তর পেতে হলে আমাদের একটু সুদূর অতীতে ফিরে যেতে হবে। তিরিশের দশকের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে যাওয়া যাক। আপনি যদি আজকের সাথে সে সময়ের তুলনা করেন,
শুরুতে তারা নিষ্পেষিত হলেও তিরিশ দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঘুরে দাঁড়ায়। সুসংগঠিত হয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন সিআইও। তাদের কর্মবিরতি ধর্মঘট ছিল পুঁজিপতি কারখানা মালিকদের জন্য সত্যিকারের বিশাল এক ধাক্কা এবং মালিকেরা সেটা উপলব্ধিও করেছিল। সে সময় শ্রমিকবান্ধব প্রশাসন ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোও বিভিন্ন কাজকর্মে সোচ্চারই ছিল। শ্রমিকেরা শুধু সক্রিয়তাতে ভর না করে সংহতি, পারস্পরিক সমর্থন, সংস্কৃতির আদান-প্রদানে জোর দেয়। এটা ছিল এমন একটি মুক্তির পথ, যে পথ মানুষকে বুঝিয়েছিল, আশাবাদী করেছিল, সুদিন শিগগিরই আসবে। বর্তমান কতটা মন্দ সেটা কোনো ব্যাপার নয়।
এতে একটা সুনির্দিষ্ট অর্জন এসেছিল। একটি নতুন চুক্তি। এটা কম কিছু নয়। হ্যাঁ, অনেক সমস্যাও ছিল তাদের, কিন্তু অর্জনও অনেক বিশাল ছিল। অবশ্য দশকের শেষ দিকেই সমাজের উচ্চশ্রেণীর পক্ষ থেকে এর জন্য তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার শুরু হয়ে গিয়েছিল। এটা হলো আসলে বিপদের সময় বন্ধুত্ব করা, কিন্তু বিপদ শেষে স্বরূপে আবির্ভূত হয়ে পিঠে ছুরি বসানোর মতো ব্যাপার। সে সময় প্রকৃত গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল। বিশ্বযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে যা প্রসার লাভ করেছিল। শুধু আমেরিকাতেই নয়, সারা বিশ্বেই। যে অধিকার এখন অবধি চলমান।
ষাটের দশকে এ তৎপরতা বিশাল আকারে বিস্তারলাভ করে। উদ্বেগ ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াকে অপসারণে কাজ চলে এবং সত্তরের দশকে এসে তা বন্ধ হয়। বিশেষত রোনাল্ড রিগ্যানের নয়া ভারসাম্যপূর্ণ উদারবাদী নীতিতত্ত্ব প্রসারের সময় থেকে। কারণ চলমান দুর্দশা থেকে সেটা অনেক ভালো ছিল, যা পুঁজিপতি মোড়লেরা বিভিন্ন মোড়কে সারা পৃথিবীতেই বজায় রেখেছিল। মূলত আমেরিকায় তারা জনসংখ্যার বিশাল অংশের সমৃদ্ধির সুযোগ বিনষ্ট করেছিল এবং সেই সাথে কার্যকরী গণতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছিল। এটাই সবখানে ঘটছে। আপনি মূল শ্রম মজুরির কথা বলুন, সেখানেও একই অবস্থা। ষাটের দশকের পর থেকে এখন পর্যন্ত কি ফারাক হয়েছে? প্রতিনিয়ত উন্নতি হয়েছে এখানে। তবে আগের তুলনায় মজবুতি আসেনি। প্রকৃত বাস্তব হলো, উন্নতির সুফল কেবল কিছু সংখ্যক লোকের পকেটেই ঢুকেছে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, গত ২০০৮ সালের সর্বশেষ পতনের পর থেকে এখনো পর্যন্ত প্রায় ৯০ শতাংশ উন্নতির ফসল গেছে গোটা জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ লোকের ঘরে। প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা আসলে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল নয়। সেটাও অসৎ ধনতন্ত্রে বদলানো ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনি যদি পাঠ্যপুস্তকে তাকান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানও বলছে প্রায় ৭০ শতাংশ জনগণ এখনো অধীনস্থ প্রতিনিধি। আর তাদের প্রতিনিধিরা তাদের চাহিদার প্রতি ভ্রুক্ষেপও করে না।
বছর কয়েক আগে, উল্লেখ করা হয়েছিল যে, আপনি যদি ভোটাভুটি ছাড়া আমেরিকানদের আর্থ সামাজিক নিবৃত্তির দিকে এমনিতে তাকান, দেখা যাবে নিজেদের তৈরি একটি প্রতিযোগিতামূলক সমাজে খুব ভালো আছে এরা। ইউরোপের মতো। যেখানে ভোট হয়ই একটি শ্রমভিত্তিক বা সামাজিক গণতান্ত্রিক দলের মধ্যে, যা এখানে হয় না। আমাদের আছে শুধু ভৌগোলিক দলগুলো। যেগুলো হয় সরাসরি গৃহযুদ্ধের ফলে সৃষ্টি হয়েছে না হয় ব্যবসায়ী পরিচালিত দল। কোনো শ্রেণীগত দল নেই এবং এই কারণেই ভালো কিছু হয়নি। এর ফলে জনগণের মধ্যে মারাত্মক বিপজ্জনক প্রবণতাসম্পন্ন গোষ্ঠী তৈরি হয়। যারা খুব হিংস্র এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে।
যেগুলো একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত সেগুলোকে সমাজের সাথে সম্পর্কিত করতে পারে। আজকের পরিস্থিতি সেই তিরিশের দশকের চেয়ে অনেকটা আলাদা। সে আশাবাদিতাই আজ নেই। আশাবাদিতা আর সংহতির বদলে আজ জায়গা নিয়েছে স্বার্থপরতা, রাগ, শঙ্কা, ঘৃণা, ক্ষতি করার প্রবণতা যা আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের সামনে ঘটতে দেখছি। এটা খুবই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি, যা মোকাবেলা করতে হবে এবং তার জন্য ছাত্ররাই সব থেকে যোগ্য অবস্থানে আছে। সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমাজের সাথে বেশি করে সংযোগ ঘটাতে হবে।
এখানে সব থেকে বড় হুমকি হলো সেসব বিষয়, যা মোকাবেলা করা অসম্ভব। মানুষের চিন্তাভাবনা এখন এমনই, তারা সে জায়গাই পছন্দ করছে এবং সেখানেই যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যেখানে ভদ্রভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব। যুদ্ধসহ সবরকমের পরিবেশগত দুর্যোগ, এসবই অত্যন্ত গুরুতর ইস্যু। কিন্তু তারা বর্তমান অবকাঠামোতে এসবের কোনোটারই কোনো সুরাহা করতে পারছে না। এটা দেখা হয়ে গেছে। এখানে সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন আনতে হবে এবং একমাত্র প্রভাব বিস্তারকারী সত্যিকার জনপ্রিয় গণতন্ত্রভিত্তিক সংগঠনই পারে নতুনভাবে জনগণকে গণতন্ত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। একটি শুভারম্ভ করতে, যা ত্রিশের দশকে ঘটেছিল।
প্রশ্ন : সম্প্রতি এক জরিপে দেখা যায়, ১৮ থেকে ২৬ বছর বয়সী তরুণদের ৫৮ শতাংশ বিশ্বাস করে সমাজতন্ত্রই একমাত্র ভারসাম্যপূর্ণ সঠিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এদের সাথে অতিরিক্ত আরো ৬ শতাংশ বলছে কমিউনিজম। মনে হচ্ছে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সমাজতন্ত্রের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু এ মুহূর্তে এটা খুব অপরিণত মনে হচ্ছে। এ মুহূর্তে মালিকানা ও এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন, নীতিমালার রূপরেখা অঙ্কন নিয়ে এমন প্রতিষ্ঠান গড়া কি সম্ভব যা সমাজ গঠন, স্থিতাবস্থা ও শান্তি আনতে পারবে? নাকি এটা তত্ত্বীয় কোনো সাধনা, যা নিরূপণ করবে যে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে আমরা এ মুহূর্তে কতটা দূরে অবস্থান করছি?
নোয়াম চমস্কি : সত্যি বলতে, আমি ঠিক নিশ্চিত নই যে, কতটা দূরে আমরা রয়েছি। শুধু গত পতনের পরের পরিণামগুলো দেখুন, একটির কথা বলছি, মূলত সরকার অটো ইন্ডাস্ট্রি দেখভাল করে থাকে। তাদের হাতে কয়েকটি অপশন ছিল। সেখান থেকে তারা একটি অপশন বাছাই করল। ট্যাক্স মাইনে, মালিক পরিচালকদের বেইলআউট। আর তারপর যা ছিল তাই। সে পুরোনো পদ্ধতিতেই ফিরে গেল। হয়তো নাম বদলেছে কিন্তু অবকাঠামো সেই একই এবং সেই একই চিন্তাধারায় চলতে হবে। গাড়ি উৎপাদন। এটাই তাদের বেছে নেয়া একমাত্র পথ।
কিন্তু আরো পথ ছিল। নাগালের মধ্যেই ছিল অন্যান্য রাস্তা। শ্রমিকদল অপশন ছিল। এতে করে কারখানা গণতান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হতে পারত এবং গণমানুষের চাহিদানুযায়ী উৎপাদনে যেতে পারত। আমাদের আর গাড়ি প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে কার্যকরী গণপরিবহন। আপনি বেইজিং থেকে কাজাখস্তান ভ্রমণের জন্য উচ্চগতির ট্রেন পাবেন। কিন্তু বোস্টন থেকে নিউ ইয়র্কে পাবেন না। অবকাঠামো ধসে পড়ছে। পরিবেশে এর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ছে। এর মানে হলো আপনার জীবনের অর্ধেকটা সময় শুধু ট্রাফিক জ্যামেই কেটে যাচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাই এর জন্য দায়ী। বাজার আপনাকে বিকল্প দিচ্ছে ভোগ্যপণ্যের। বলছে টয়োটা অথবা ফোর্ড নাও। এটা আপনাকে গাড়ি অথবা রুচিশীল গণপরিবহন বাছাইয়ের সুযোগ দেবে না।
সব বিকল্পই সমাজ, সংহতি, জনপ্রিয় গণতন্ত্র, জনপ্রিয় সংগঠন ইত্যাদির সাথে জড়িত থাকে। জনপ্রিয়তার প্রভাব সংশ্লিষ্ট একটি ঘটনা ঘটেছিল বছর দুই আগে। এটা ঘটেছিল বোস্টন শহরতলিতে ঠিক আমার বাড়ির পাশেই। সেখানে একটি মার্জিত লাভজনক উৎপাদনশীল বিমান যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা ছিল। কারখানাটির মালিক বহুজাতিক কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিলো তাদের ব্যবসায় গুটিয়ে নেয়ার। যেহেতু পর্যাপ্ত মুনাফা হচ্ছে না। শ্রমিক ইউনিয়ন প্রস্তাব দিলো তাদের কাছে বিক্রি করার, যা বহুজাতিক কোম্পানির জন্য লাভজনক ছিল। কিন্তু আমার ধারণা, তারা প্রধানত শ্রেণী বৈষম্যের কারণেই তা প্রত্যাখ্যান করে। যদি ইউনিয়নের কোনো জনপ্রিয় সমর্থন থাকত, তবে তারা কারখানাটি আদায় করতে পারত। আমি মনে করি, তারা কারখানাটিকে শ্রমিক মালিকানাধীন ও শ্রমিক দ্বারা পরিচালনা করে খুব সফলভাবেই এগিয়ে নিতে পারত।
আমার অনুমান এটা আসলে খুব সুদূরে নয়। আমি মনে করি, বেশির ভাগ বিষয়ই জনসচেতনতার ঠিক নিচের পৃষ্ঠেই অবস্থান করে। এটাকে এগিয়ে নিতে হবে। এটা সত্যি যে, বেশির ভাগ ইস্যুই আকস্মিক। এটা উপলব্ধি করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে স্থবির রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি কী? এটা আপনি সবসময় দেখবেন। বার্নি স্যান্ডার্সের কথাই ধরুন। তার অবস্থানকে চরমপন্থী এবং আদিম হিসেবে গণ্য করা হয়। অথচ তাদের দেখুন যারা দীর্ঘকাল ধরে জনপ্রিয়তার সাথেই আছে। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার কথাই বলুন, এখন প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ এর দাবিদার। মজার ব্যাপার হলো, যখন থেকে কেউ এ ব্যাপারে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে, তখন থেকেই এ খাতে প্রতিনিয়ত ভূতের কারবার চলছে। আগের কথা চিন্তা করে দেখুন, একই অবস্থা। প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মৃত্যুর পর প্রায় ৭০ শতাংশ জনগণ ভেবেছিল নাগরিকদের অধিকার হিসেবেই এটা সংবিধানে থাকা উচিৎ। আর ৪০ শতাংশ ভেবেছিল এটা সংবিধানে আছেই।
এটা সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত অধিকার। রাজনৈতিকভাবে একে অসম্ভব বলা হয়। আসলে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ফার্মাসিউটিক্যাল করপোরেশনগুলো এটা মানবে না। এটা আপনাকে জনপ্রিয়তাহীন সমাজ সম্পর্কে একটু ধারণা দেয়। একইরকমভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। যেমন বিনামূল্যে পড়াশোনা, ধনীদের ওপর উচ্চহারের কর, এগুলো অনেক দীর্ঘ সময়ের চাহিদা। কিন্তু নীতিনির্ধারণ হয়েছে সবসময় উল্টোপথে। যদি জনপ্রিয় ব্যক্তিবিশেষের মতামতগুলো সংগঠিত করা যায়, প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যায় এবং ইউনিয়নের মতো সংহতি সৃষ্টি করা যায়, তাহলে আমি মনে করি চাপা পড়ে থাকা ইস্যুগুলো সম্পূর্ণ সক্রিয় হবে এবং নীতিনির্ধারণেও তা বাস্তবায়িত হবে।
নোয়াম চমস্কি : সত্যি বলতে, আমি ঠিক নিশ্চিত নই যে, কতটা দূরে আমরা রয়েছি। শুধু গত পতনের পরের পরিণামগুলো দেখুন, একটির কথা বলছি, মূলত সরকার অটো ইন্ডাস্ট্রি দেখভাল করে থাকে। তাদের হাতে কয়েকটি অপশন ছিল। সেখান থেকে তারা একটি অপশন বাছাই করল। ট্যাক্স মাইনে, মালিক পরিচালকদের বেইলআউট। আর তারপর যা ছিল তাই। সে পুরোনো পদ্ধতিতেই ফিরে গেল। হয়তো নাম বদলেছে কিন্তু অবকাঠামো সেই একই এবং সেই একই চিন্তাধারায় চলতে হবে। গাড়ি উৎপাদন। এটাই তাদের বেছে নেয়া একমাত্র পথ।
কিন্তু আরো পথ ছিল। নাগালের মধ্যেই ছিল অন্যান্য রাস্তা। শ্রমিকদল অপশন ছিল। এতে করে কারখানা গণতান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হতে পারত এবং গণমানুষের চাহিদানুযায়ী উৎপাদনে যেতে পারত। আমাদের আর গাড়ি প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে কার্যকরী গণপরিবহন। আপনি বেইজিং থেকে কাজাখস্তান ভ্রমণের জন্য উচ্চগতির ট্রেন পাবেন। কিন্তু বোস্টন থেকে নিউ ইয়র্কে পাবেন না। অবকাঠামো ধসে পড়ছে। পরিবেশে এর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ছে। এর মানে হলো আপনার জীবনের অর্ধেকটা সময় শুধু ট্রাফিক জ্যামেই কেটে যাচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাই এর জন্য দায়ী। বাজার আপনাকে বিকল্প দিচ্ছে ভোগ্যপণ্যের। বলছে টয়োটা অথবা ফোর্ড নাও। এটা আপনাকে গাড়ি অথবা রুচিশীল গণপরিবহন বাছাইয়ের সুযোগ দেবে না।
সব বিকল্পই সমাজ, সংহতি, জনপ্রিয় গণতন্ত্র, জনপ্রিয় সংগঠন ইত্যাদির সাথে জড়িত থাকে। জনপ্রিয়তার প্রভাব সংশ্লিষ্ট একটি ঘটনা ঘটেছিল বছর দুই আগে। এটা ঘটেছিল বোস্টন শহরতলিতে ঠিক আমার বাড়ির পাশেই। সেখানে একটি মার্জিত লাভজনক উৎপাদনশীল বিমান যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা ছিল। কারখানাটির মালিক বহুজাতিক কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিলো তাদের ব্যবসায় গুটিয়ে নেয়ার। যেহেতু পর্যাপ্ত মুনাফা হচ্ছে না। শ্রমিক ইউনিয়ন প্রস্তাব দিলো তাদের কাছে বিক্রি করার, যা বহুজাতিক কোম্পানির জন্য লাভজনক ছিল। কিন্তু আমার ধারণা, তারা প্রধানত শ্রেণী বৈষম্যের কারণেই তা প্রত্যাখ্যান করে। যদি ইউনিয়নের কোনো জনপ্রিয় সমর্থন থাকত, তবে তারা কারখানাটি আদায় করতে পারত। আমি মনে করি, তারা কারখানাটিকে শ্রমিক মালিকানাধীন ও শ্রমিক দ্বারা পরিচালনা করে খুব সফলভাবেই এগিয়ে নিতে পারত।
আমার অনুমান এটা আসলে খুব সুদূরে নয়। আমি মনে করি, বেশির ভাগ বিষয়ই জনসচেতনতার ঠিক নিচের পৃষ্ঠেই অবস্থান করে। এটাকে এগিয়ে নিতে হবে। এটা সত্যি যে, বেশির ভাগ ইস্যুই আকস্মিক। এটা উপলব্ধি করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে স্থবির রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি কী? এটা আপনি সবসময় দেখবেন। বার্নি স্যান্ডার্সের কথাই ধরুন। তার অবস্থানকে চরমপন্থী এবং আদিম হিসেবে গণ্য করা হয়। অথচ তাদের দেখুন যারা দীর্ঘকাল ধরে জনপ্রিয়তার সাথেই আছে। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার কথাই বলুন, এখন প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ এর দাবিদার। মজার ব্যাপার হলো, যখন থেকে কেউ এ ব্যাপারে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে, তখন থেকেই এ খাতে প্রতিনিয়ত ভূতের কারবার চলছে। আগের কথা চিন্তা করে দেখুন, একই অবস্থা। প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মৃত্যুর পর প্রায় ৭০ শতাংশ জনগণ ভেবেছিল নাগরিকদের অধিকার হিসেবেই এটা সংবিধানে থাকা উচিৎ। আর ৪০ শতাংশ ভেবেছিল এটা সংবিধানে আছেই।
এটা সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত অধিকার। রাজনৈতিকভাবে একে অসম্ভব বলা হয়। আসলে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ফার্মাসিউটিক্যাল করপোরেশনগুলো এটা মানবে না। এটা আপনাকে জনপ্রিয়তাহীন সমাজ সম্পর্কে একটু ধারণা দেয়। একইরকমভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। যেমন বিনামূল্যে পড়াশোনা, ধনীদের ওপর উচ্চহারের কর, এগুলো অনেক দীর্ঘ সময়ের চাহিদা। কিন্তু নীতিনির্ধারণ হয়েছে সবসময় উল্টোপথে। যদি জনপ্রিয় ব্যক্তিবিশেষের মতামতগুলো সংগঠিত করা যায়, প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যায় এবং ইউনিয়নের মতো সংহতি সৃষ্টি করা যায়, তাহলে আমি মনে করি চাপা পড়ে থাকা ইস্যুগুলো সম্পূর্ণ সক্রিয় হবে এবং নীতিনির্ধারণেও তা বাস্তবায়িত হবে।
প্রশ্ন : আপনার আগানোর নীতিপদ্ধতি বা মডেল কী হবে? কিসের ভিত্তিতে আমরা অর্থনীতিতে গণতন্ত্র ও মালিকানা প্রশ্নে জড়িত হতে পারি? এটা কি শ্রমিককেন্দ্রিক ভাবধারা? ভর্তুকি নীতিনির্ভর হবে অর্থনৈতিক কাঠামো? বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কী ভাবছেন? আপনি কি কিছু নীতিকে মিশ্রিত করে নতুনরূপ দিতে চাইছেন? জাতীয় পর্যায়ের কৌশল সৃষ্টি করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহজাত প্রতিদ্বন্দ্বী স্বার্থ ও লক্ষ্য উদ্দেশ্যগুলোকে মিলিয়ে ফেলা হবে কিনা?
নোয়াম চমস্কি : আমার মতে, কোনোরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের সমভাবাপন্ন ক্ষেত্রই শুধু নয়, সবখানেই এসব উদ্যোগই অনুসৃত হওয়া উচিত। কারণ তারা পারস্পরিক সমঝোতা শক্তিশালী করছে। আপনি এটাও বলতে পারেন, সমাজে শ্রমিক মালিকানাধীন এবং পরিচালিত উৎপাদন সুবিধা, যাতে গ্রহণযোগ্য বাজেট ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকবে। এরা একে অপরকে সহায়তা করবে এবং তারা বিস্তৃতও হতে পারবে। এভাবেই বরং তারা দ্রুত বিস্তার লাভ করবে। উদাহরণস্বরূপ যে বোস্টন শহরের কথা বললাম, তা সব জায়গায় একইরকম হতে পারে। ডেভিড এলারম্যানের মতো মানুষ এ মতের ওপর বছরের পর বছর ধরে কাজ করছেন।
এরকম পরিস্থিতি অনেক আছে যে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের মান অনুযায়ী কাক্সিক্ষত মুনাফা না পেয়ে ব্যবসায় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের মান অনুযায়ী তা যথেষ্ট ছিল। যখন শ্রমিকেরা মালিকদের কাছ থেকে কোম্পানি কিনতে চাইল, মালিকেরা তা প্রত্যাখ্যান করল। অথচ এ বিক্রিতে তারা তাদের কাক্সিক্ষত মুনাফা পেত। আমি মনে করি, তারা যদি সেটা বুঝতে পারত, তাহলে কল্যাণ বিস্তৃত হতো। কোনো একজন যদি শুরুটা করে, বাকিরাও তাকে অনুসরণ করবে।
কিছু কিছু পন্থা কিংবা যেকোনো একটি দারুণ পন্থাই পারে পৃথিবীকে উন্নত ও প্রসারিত করতে। সবদিক থেকে নিখুঁত হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু মডেল হতে হবে। আমার মনে হয় এটি মানুষের নিকট আবেদন বাড়িয়েছে। আমাদের শ্রম মজুরির বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এটা স্মরণ করা একটু কঠিন, আপনি যদি বেশ কিছুটা পিছিয়ে উনিশ শতকের শেষ দিকে শিল্পবিপ্লবের শুরুতে ফিরে যান, সে সময় মজুরির বিনিময়ে শ্রম আর দাসত্ব একই কথা ছিল। পার্থক্য হলো সে সময়টা ক্ষণস্থায়ী ছিল। রিপাবলিকান দলের স্লোগান ছিল ‘মজুরির বিনিময়ে দাসত্বের বিরুদ্ধে।’ কেন কিছু মানুষ আদেশ দেবে আর বাকিদের তা মানতে হবে? এটা যতই সাময়িক হোক না কেন, মূলত তাতো মনিব আর দাসের সম্পর্কই।
উনিশ শতকের শেষে শ্রমিক আন্দোলন দেখুন, তখন প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক মালিকানাধীন ছিল। শ্রমিক পরিচালিত গণমাধ্যম ছিল। শ্রমিকরাই সব জায়গায় পত্রিকা লিখত। আর তাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ছিল। তাদের বলা হতো ‘কারখানার নারী’। শ্রমমজুরির ওপর আঘাত এলে ধ্রুবক ছিল। তখন স্লোগান ছিল ‘যারা কারখানায় খাটুনি খাটে কারখানা তাদেরই হওয়া উচিত।’ তারা সমাজের অধোগতির ও সংস্কৃতি ধ্বংসের বিরোধিতা করছিল, যা সমাজকে জোরপূর্বক শিল্পায়িত করার চেষ্টার একটা অংশ ছিল। তারা কৃষি আন্দোলনের সাথে যুক্ত হতে শুরু করল। সমাজ তখনো আপাদমস্তক কৃষিনির্ভর সমাজই ছিল। কৃষকদের দলগুলো উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ব্যাংকগুলো ও ব্যবসায়ীদের থেকে ঋণ পেয়েছিল এবং তাদের নিজেদের একটি বলয় সৃষ্টি করেছিল। এটা সত্যিই প্রকৃত গণতান্ত্রিক মুহূর্ত ছিল। সেখানে সব শ্রমিক নিয়ন্ত্রিত শহর যেমন হোমস্টেড, পেনসিলভানিয়া ছিল প্রধান শিল্পাঞ্চল। সেগুলোকে যদিও অনেকটা জোর করেই ধ্বংস করা হয় তবু আমি মনে করি আবার তা জেগে উঠতে পারে। সামান্য একটু নাড়ার অপেক্ষায় আছে।
নোয়াম চমস্কি : আমার মতে, কোনোরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের সমভাবাপন্ন ক্ষেত্রই শুধু নয়, সবখানেই এসব উদ্যোগই অনুসৃত হওয়া উচিত। কারণ তারা পারস্পরিক সমঝোতা শক্তিশালী করছে। আপনি এটাও বলতে পারেন, সমাজে শ্রমিক মালিকানাধীন এবং পরিচালিত উৎপাদন সুবিধা, যাতে গ্রহণযোগ্য বাজেট ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকবে। এরা একে অপরকে সহায়তা করবে এবং তারা বিস্তৃতও হতে পারবে। এভাবেই বরং তারা দ্রুত বিস্তার লাভ করবে। উদাহরণস্বরূপ যে বোস্টন শহরের কথা বললাম, তা সব জায়গায় একইরকম হতে পারে। ডেভিড এলারম্যানের মতো মানুষ এ মতের ওপর বছরের পর বছর ধরে কাজ করছেন।
এরকম পরিস্থিতি অনেক আছে যে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের মান অনুযায়ী কাক্সিক্ষত মুনাফা না পেয়ে ব্যবসায় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের মান অনুযায়ী তা যথেষ্ট ছিল। যখন শ্রমিকেরা মালিকদের কাছ থেকে কোম্পানি কিনতে চাইল, মালিকেরা তা প্রত্যাখ্যান করল। অথচ এ বিক্রিতে তারা তাদের কাক্সিক্ষত মুনাফা পেত। আমি মনে করি, তারা যদি সেটা বুঝতে পারত, তাহলে কল্যাণ বিস্তৃত হতো। কোনো একজন যদি শুরুটা করে, বাকিরাও তাকে অনুসরণ করবে।
কিছু কিছু পন্থা কিংবা যেকোনো একটি দারুণ পন্থাই পারে পৃথিবীকে উন্নত ও প্রসারিত করতে। সবদিক থেকে নিখুঁত হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু মডেল হতে হবে। আমার মনে হয় এটি মানুষের নিকট আবেদন বাড়িয়েছে। আমাদের শ্রম মজুরির বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এটা স্মরণ করা একটু কঠিন, আপনি যদি বেশ কিছুটা পিছিয়ে উনিশ শতকের শেষ দিকে শিল্পবিপ্লবের শুরুতে ফিরে যান, সে সময় মজুরির বিনিময়ে শ্রম আর দাসত্ব একই কথা ছিল। পার্থক্য হলো সে সময়টা ক্ষণস্থায়ী ছিল। রিপাবলিকান দলের স্লোগান ছিল ‘মজুরির বিনিময়ে দাসত্বের বিরুদ্ধে।’ কেন কিছু মানুষ আদেশ দেবে আর বাকিদের তা মানতে হবে? এটা যতই সাময়িক হোক না কেন, মূলত তাতো মনিব আর দাসের সম্পর্কই।
উনিশ শতকের শেষে শ্রমিক আন্দোলন দেখুন, তখন প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক মালিকানাধীন ছিল। শ্রমিক পরিচালিত গণমাধ্যম ছিল। শ্রমিকরাই সব জায়গায় পত্রিকা লিখত। আর তাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ছিল। তাদের বলা হতো ‘কারখানার নারী’। শ্রমমজুরির ওপর আঘাত এলে ধ্রুবক ছিল। তখন স্লোগান ছিল ‘যারা কারখানায় খাটুনি খাটে কারখানা তাদেরই হওয়া উচিত।’ তারা সমাজের অধোগতির ও সংস্কৃতি ধ্বংসের বিরোধিতা করছিল, যা সমাজকে জোরপূর্বক শিল্পায়িত করার চেষ্টার একটা অংশ ছিল। তারা কৃষি আন্দোলনের সাথে যুক্ত হতে শুরু করল। সমাজ তখনো আপাদমস্তক কৃষিনির্ভর সমাজই ছিল। কৃষকদের দলগুলো উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ব্যাংকগুলো ও ব্যবসায়ীদের থেকে ঋণ পেয়েছিল এবং তাদের নিজেদের একটি বলয় সৃষ্টি করেছিল। এটা সত্যিই প্রকৃত গণতান্ত্রিক মুহূর্ত ছিল। সেখানে সব শ্রমিক নিয়ন্ত্রিত শহর যেমন হোমস্টেড, পেনসিলভানিয়া ছিল প্রধান শিল্পাঞ্চল। সেগুলোকে যদিও অনেকটা জোর করেই ধ্বংস করা হয় তবু আমি মনে করি আবার তা জেগে উঠতে পারে। সামান্য একটু নাড়ার অপেক্ষায় আছে।
প্রশ্ন : আপনার এক ধরনের অগ্রাহ্যনীতি সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হচ্ছে কিনা? আপনি নীতিগুলোর বিন্যাস কেমন দেখতে চান, যা উদ্দীপক হবে সমাজের অভ্যন্তরীণ আকৃতিতে। যা সমরবাদ বা সাম্রাজ্যবাদের দিকে খুব বেশি ঝুঁকবে না। আমাদের সমাজব্যবস্থায়, অর্থনীতিতে, জাতীয় রাজনীতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট্যগুলো কেমন হওয়া উচিত?
নোয়াম চমস্কি : মৌলিকভাবে আমি মনে করি এ সমরবাদ সাম্রাজ্যবাদ আমাদের সংহতিকে হ্রাস করেছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংহতি কমিয়ে দেয়। কিছু ভারী ইস্যু যেমন অভিবাসী সঙ্কটকে কি বলা হয়েছে? মানুষ কেন আমেরিকায় মেক্সিকোতে, যুক্তরাষ্ট্রে উড়ে আসছে? কারণ তাদের সমাজ আমরা ধ্বংস করেছি। তারা কিন্তু আমেরিকায় থাকতে চায় না। তারা তাদের বাড়িতেই থাকতে চায়। আমাদের উচিত তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করা। প্রথমে অবশ্যই তাদের অনুমতি দেয়া উচিত। যদি তাতে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে যে অশান্তি আমরা তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি তা থেকে।
তারপর তাদের নিজেদের সমাজ পুনর্গঠনে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা। একই কথা ইউরোপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আফ্রিকা থেকে ইউরোপে মানুষের বন্যা বয়ে যায়। কেন? এর উত্তর আছে বিগত দুই শতাব্দীর ইতিহাসে। ইউরোপ এবং আমেরিকা উভয়ই মানুষগুলোকে শোষণ করেছে। এটা ইউরোপের দায়িত্ব, তারা যা ধ্বংস করেছে, সম্পদ আহরণ করেছে, সেসব অঞ্চল পুনর্গঠনে অংশগ্রহণ করা।
এই সত্যিটা মেনে নেয়া অভ্যন্তরীণভাবেই দেশের জন্য ভালো হবে। নিজেদের সম্পদ এবং নাগরিক অধিকার আহরণ করো। ভুলে গেলে চলবে না, আমরাও এ সফলতা খুব বড় পরিসরের দাসত্ব থেকে পেয়েছি। আরো তীব্রভাবে বললে, ইতিহাসের পাশবিক দাসত্ব থেকে। উনিশ শতকে তুলাই ছিল জ্বালানি তেলের সমকক্ষ। যখন প্রথম শিল্পবিপ্লব প্রসার লাভ করল, সম্পদ এবং নাগরিক অধিকার আমেরিকা ইংল্যান্ড ও অন্যান্য জায়গায় সমৃদ্ধ হলো, তখন তারা ব্যাপকভাবে আমেরিকার ভয়ঙ্কর দাস শিবিরের ওপর ঝুঁকতে লাগল।
যেখানে অত্যন্ত মনোরমভাবে বর্বরোচিত নির্যাতন করা হতো কাঁচামাল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য। যা দিয়ে উৎপাদনহার সমৃদ্ধ করা হতো। প্রধান উৎপাদনশীল মাধ্যম ছিল টেক্সটাইল শিল্প। টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা এবং এই বাণিজ্যই ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্যকারী। এটার অবশিষ্টাংশ অবশ্য কখনোই বিলীন হয়নি। আর ভেতরগত প্রশ্ন যেটা তার উত্তর হলো, সে সময় আর এ সময় উভয়েরই একই বৈশিষ্ট্য। সাম্রাজ্যবাদী এবং বিধ্বংসী।
আফ্রিকার কথা বলি। উনিশ শতকের শেষ দিকেও জাপানের অবস্থা আর পশ্চিম আফ্রিকার অংশবিশেষের অবস্থা একই মানের ছিল। একটাই পার্থক্য ছিল। জাপানে উপনিবেশ ছিল না। তাই তারা শিল্প সমাজের মডেল অনুসরণ করে নিজেরাই শিল্প সমাজের একটি মহীরুহ হয়ে উঠেছে, যা পশ্চিম আফ্রিকায় সাম্রাজ্যবাদী থাবার মাধ্যমে রোধ করা হয়েছে। এটা ভাবতেও অদ্ভুত লাগে! যদি পেছনে ১৮২০ সালে ফিরে যাই, আমেরিকা এবং মিসর প্রায় একই অবস্থানে ছিল। উভয়ই কৃষিজাত বাণিজ্যে সমৃদ্ধ ছিল। তাদের ছিল তুলার প্রার্চুযতা, যা সে যুগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ছিল। মিসরে উন্নয়নশীল সরকার ছিল। ছিল ঠিক এখানকার হ্যামিলটনিয়ান পদ্ধতির মতোই উন্নয়নশীল সমাজ। পার্থক্য হলো আমেরিকা সে সময় সা¤্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত ছিল। মিসর ছিল না। ব্রিটিশরা এটা পরিষ্কারভাবেই চায়নি যে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তাদের একটি স্বাধীন প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র থাকুক। সময়ের সাথে আজকের মিসর, মিসর হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। এই হলো আজকের ইতিহাস। এটাই সব নয়। তবে, অনেকটা। এ দু’টি বিষয়েই আমাদের চিন্তা করা উচিত।
সাম্রাজ্যবাদী অপরাধের প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ভুক্তভোগীদের সাথে সংহতি স্থাপন। তাদের স্বীকৃতি দেয়া ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া। এতক্ষণ যা বললাম তা কোনো প্রাচীন ইতিহাস নয়। ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কটের দিকে তাকান। আফগান আর ইরাকিরা গ্রিক বন্দিশিবিরে ভয়ঙ্কর কয়েদজীবন যাপন করছে। কেন আফগান এবং ইরাকিরাই? কী এমন ঘটেছে আফগানিস্তান ও ইরাকে? ভেবে দেখুন।
নোয়াম চমস্কি : মৌলিকভাবে আমি মনে করি এ সমরবাদ সাম্রাজ্যবাদ আমাদের সংহতিকে হ্রাস করেছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংহতি কমিয়ে দেয়। কিছু ভারী ইস্যু যেমন অভিবাসী সঙ্কটকে কি বলা হয়েছে? মানুষ কেন আমেরিকায় মেক্সিকোতে, যুক্তরাষ্ট্রে উড়ে আসছে? কারণ তাদের সমাজ আমরা ধ্বংস করেছি। তারা কিন্তু আমেরিকায় থাকতে চায় না। তারা তাদের বাড়িতেই থাকতে চায়। আমাদের উচিত তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করা। প্রথমে অবশ্যই তাদের অনুমতি দেয়া উচিত। যদি তাতে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে যে অশান্তি আমরা তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি তা থেকে।
তারপর তাদের নিজেদের সমাজ পুনর্গঠনে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা। একই কথা ইউরোপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আফ্রিকা থেকে ইউরোপে মানুষের বন্যা বয়ে যায়। কেন? এর উত্তর আছে বিগত দুই শতাব্দীর ইতিহাসে। ইউরোপ এবং আমেরিকা উভয়ই মানুষগুলোকে শোষণ করেছে। এটা ইউরোপের দায়িত্ব, তারা যা ধ্বংস করেছে, সম্পদ আহরণ করেছে, সেসব অঞ্চল পুনর্গঠনে অংশগ্রহণ করা।
এই সত্যিটা মেনে নেয়া অভ্যন্তরীণভাবেই দেশের জন্য ভালো হবে। নিজেদের সম্পদ এবং নাগরিক অধিকার আহরণ করো। ভুলে গেলে চলবে না, আমরাও এ সফলতা খুব বড় পরিসরের দাসত্ব থেকে পেয়েছি। আরো তীব্রভাবে বললে, ইতিহাসের পাশবিক দাসত্ব থেকে। উনিশ শতকে তুলাই ছিল জ্বালানি তেলের সমকক্ষ। যখন প্রথম শিল্পবিপ্লব প্রসার লাভ করল, সম্পদ এবং নাগরিক অধিকার আমেরিকা ইংল্যান্ড ও অন্যান্য জায়গায় সমৃদ্ধ হলো, তখন তারা ব্যাপকভাবে আমেরিকার ভয়ঙ্কর দাস শিবিরের ওপর ঝুঁকতে লাগল।
যেখানে অত্যন্ত মনোরমভাবে বর্বরোচিত নির্যাতন করা হতো কাঁচামাল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য। যা দিয়ে উৎপাদনহার সমৃদ্ধ করা হতো। প্রধান উৎপাদনশীল মাধ্যম ছিল টেক্সটাইল শিল্প। টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা এবং এই বাণিজ্যই ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্যকারী। এটার অবশিষ্টাংশ অবশ্য কখনোই বিলীন হয়নি। আর ভেতরগত প্রশ্ন যেটা তার উত্তর হলো, সে সময় আর এ সময় উভয়েরই একই বৈশিষ্ট্য। সাম্রাজ্যবাদী এবং বিধ্বংসী।
আফ্রিকার কথা বলি। উনিশ শতকের শেষ দিকেও জাপানের অবস্থা আর পশ্চিম আফ্রিকার অংশবিশেষের অবস্থা একই মানের ছিল। একটাই পার্থক্য ছিল। জাপানে উপনিবেশ ছিল না। তাই তারা শিল্প সমাজের মডেল অনুসরণ করে নিজেরাই শিল্প সমাজের একটি মহীরুহ হয়ে উঠেছে, যা পশ্চিম আফ্রিকায় সাম্রাজ্যবাদী থাবার মাধ্যমে রোধ করা হয়েছে। এটা ভাবতেও অদ্ভুত লাগে! যদি পেছনে ১৮২০ সালে ফিরে যাই, আমেরিকা এবং মিসর প্রায় একই অবস্থানে ছিল। উভয়ই কৃষিজাত বাণিজ্যে সমৃদ্ধ ছিল। তাদের ছিল তুলার প্রার্চুযতা, যা সে যুগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ছিল। মিসরে উন্নয়নশীল সরকার ছিল। ছিল ঠিক এখানকার হ্যামিলটনিয়ান পদ্ধতির মতোই উন্নয়নশীল সমাজ। পার্থক্য হলো আমেরিকা সে সময় সা¤্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত ছিল। মিসর ছিল না। ব্রিটিশরা এটা পরিষ্কারভাবেই চায়নি যে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তাদের একটি স্বাধীন প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র থাকুক। সময়ের সাথে আজকের মিসর, মিসর হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। এই হলো আজকের ইতিহাস। এটাই সব নয়। তবে, অনেকটা। এ দু’টি বিষয়েই আমাদের চিন্তা করা উচিত।
সাম্রাজ্যবাদী অপরাধের প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ভুক্তভোগীদের সাথে সংহতি স্থাপন। তাদের স্বীকৃতি দেয়া ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া। এতক্ষণ যা বললাম তা কোনো প্রাচীন ইতিহাস নয়। ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কটের দিকে তাকান। আফগান আর ইরাকিরা গ্রিক বন্দিশিবিরে ভয়ঙ্কর কয়েদজীবন যাপন করছে। কেন আফগান এবং ইরাকিরাই? কী এমন ঘটেছে আফগানিস্তান ও ইরাকে? ভেবে দেখুন।
No comments:
Post a Comment