রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে
নির্মূল করতে সব রকম কৌশল প্রয়োগ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গণহত্যা,
গণধর্ষণ, এমনকি পরিকল্পিতভাবে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। বহু লোককে সেনা
সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। গুম হওয়া লোকদের পরিবারের সদস্যরা তাদের আর খুঁজে
পায়নি। মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে
এ ধরনের বহু রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে পরিকল্পিতভাবে
হত্যা করা হয়েছে যুবক ও যুবতীদের।
টেকনাফ ও উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরগুলো ঘুরে দেখা গেছে আশ্রয় নেয়া মানুষদের মধ্যে যুবক ও যুবতীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আগুন দেয়ার আগে যুবক ও যুবতীদের আলাদাভাবে বাছাই করা হতো। এছাড়া শিক্ষক, মসজিদের ইমামরা ছিল হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে বিশেষ টার্গেট।
টেকনাফের শামলাপুরে আশ্রয় নেয়া মংডুর মেরুলা থেকে নদীপথে পালিয়ে আসা জোবায়ের নামে এক রোহিঙ্গা জানান, তাদের গ্রামে আগুন ধরে দেয়ার আগে বাড়িতে ঢুকে যুবক ও যুবতীদের আলাদা করে হত্যা করেছে। এ সময় তার বোন জামাইকে হত্যা করে সৈন্যরা। তিনি বলেন, এ সময় বিভিন্ন পরিবারের কমপক্ষে ৫০ জনকে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে কিছু যুবতীকে সৈন্যরা ধরে নিয়ে গেছে। তারা কোথায় কিভাবে আছে তা সে জানে না।
গ্রামে আগুন দেয়ার আগে মিয়ানমারের সৈন্যরা তাদের বেশ কিছু নৌকায় আগুন ধরিয়ে দেয় যাতে কেউ পালিয়ে যেতে না পারে।
এই গ্রামের আরেক বাসিন্দা জাফর আহমদ জানান, তার দুই ভাই মমতাজ উল্লাহ ও দিদার উল্লাহকে সৈন্যরা হত্যা করে। ভাগ্যক্রমে তিনি পালিয়ে আসতে পেরেছেন।
উখিয়ার তমব্রু সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসা মমতাজ নামে এক যুবক জানান, সাত দিন পায়ে হেঁটে তারা নানা ঘুরপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তারা দলবদ্ধভাবে আসার সময় রাস্তায় একাধিক যুবক ও যুবতীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। এর মধ্যে গলাকাটা লাশও ছিল। এই যুবক জানান, অনেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সৈন্য ও সৈন্যদের সহযোগী বৌদ্ধ তরুণদের আক্রমণের মুখে পড়েছেন। বালুখালীর এই শরণার্থী শিবিরে আমেনা নামে এক নারী আসার পথে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ওই নারী তার স্বামীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। রোহিঙ্গা যুবকরা যাতে আর কখনো মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে সে কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
শরনার্থীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে গ্রামে আগুন দেয়ার পর এবং একাধিক হত্যাকাণ্ডের পর মানুষ দিগবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। ফলে অনেক পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। থ্যাংখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় শিবিরে রহমত উল্লাহর পরিবারের প্রায় সব সদস্য আসতে পারলেও তার এক বোন আসতে পারেননি। ৬০ বছর বয়সী রহমত উল্লাহ জানান, পক্ষঘাতগ্রস্ত তার এক মামার ঘরে আগুন দেয়ার পর গড়িয়ে কোনোমতে বাড়ির উঠোনে আসতে পারলেও এ সময় তাকে প্রথমে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করা হয়। বোনের অপেক্ষায় থাকা রহমত উল্লাহ কথা বলার সময় বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার বোনকে আর খুঁজে পাবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
তিনি জানান, তার মামার পরিবার মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামটিতে বেশ সম্পদশালী ছিল। ১৯৭৮ সালে যখন রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয় তখন তার নানা বাংলাদেশে এসেছিলেন। কিন্তু এরপর তাদের পরিবারের আর কেউ এদেশে আসেননি বলে জানান। তারা সেখানে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং ভালো ছিলেন। রহমত উল্লাহ বলেন এভাবে ধর্মের কারণে নিজ দেশের ভিটেমাটি ফেলে আসতে হবে, তা কখনো আমাদের মনে হয়নি।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, তারা যাতে আর কখনো তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে না পারেন এ কারণে গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। উখিয়ার তমব্রু সীমান্ত থেকে দেখা গেছে ওপারের গ্রামগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কারনে বড় গাছগুলো জ্বলে বিবর্ণ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে দূরের এলাকা বুচিডং বা রথেডং থেকে যারা এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় পায়ে হেঁটে পাহাড় জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন; এ ধরনের পরিবারের অনেক শিশু না খেয়ে রাস্তায় মারা গেছে। আবার খাবার না পেয়ে লতাপাতা খেয়ে থেকেছেন। তমব্রু সীমান্তে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির একজন সদস্য জানান, ধানক্ষেতে শিশুর জন্মের মতো অমানবিক দৃশ্য তাদের দেখতে হয়েছে।
বেশির ভাগ রোহিঙ্গা পরিবারের কোনো কোনো সদস্য হত্যা, গুম বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে এক ধরনের মানসিক অসুস্থতার মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে শিশুদের উপর এর প্রভাব পড়েছে মারাত্মক। অনেক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরে যাবেন কি না এমন প্রশ্ন করলে সেখানে গেলে তাদের মেরে ফেলা হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
টেকনাফ ও উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরগুলো ঘুরে দেখা গেছে আশ্রয় নেয়া মানুষদের মধ্যে যুবক ও যুবতীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আগুন দেয়ার আগে যুবক ও যুবতীদের আলাদাভাবে বাছাই করা হতো। এছাড়া শিক্ষক, মসজিদের ইমামরা ছিল হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে বিশেষ টার্গেট।
টেকনাফের শামলাপুরে আশ্রয় নেয়া মংডুর মেরুলা থেকে নদীপথে পালিয়ে আসা জোবায়ের নামে এক রোহিঙ্গা জানান, তাদের গ্রামে আগুন ধরে দেয়ার আগে বাড়িতে ঢুকে যুবক ও যুবতীদের আলাদা করে হত্যা করেছে। এ সময় তার বোন জামাইকে হত্যা করে সৈন্যরা। তিনি বলেন, এ সময় বিভিন্ন পরিবারের কমপক্ষে ৫০ জনকে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে কিছু যুবতীকে সৈন্যরা ধরে নিয়ে গেছে। তারা কোথায় কিভাবে আছে তা সে জানে না।
গ্রামে আগুন দেয়ার আগে মিয়ানমারের সৈন্যরা তাদের বেশ কিছু নৌকায় আগুন ধরিয়ে দেয় যাতে কেউ পালিয়ে যেতে না পারে।
এই গ্রামের আরেক বাসিন্দা জাফর আহমদ জানান, তার দুই ভাই মমতাজ উল্লাহ ও দিদার উল্লাহকে সৈন্যরা হত্যা করে। ভাগ্যক্রমে তিনি পালিয়ে আসতে পেরেছেন।
উখিয়ার তমব্রু সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসা মমতাজ নামে এক যুবক জানান, সাত দিন পায়ে হেঁটে তারা নানা ঘুরপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তারা দলবদ্ধভাবে আসার সময় রাস্তায় একাধিক যুবক ও যুবতীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। এর মধ্যে গলাকাটা লাশও ছিল। এই যুবক জানান, অনেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সৈন্য ও সৈন্যদের সহযোগী বৌদ্ধ তরুণদের আক্রমণের মুখে পড়েছেন। বালুখালীর এই শরণার্থী শিবিরে আমেনা নামে এক নারী আসার পথে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ওই নারী তার স্বামীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। রোহিঙ্গা যুবকরা যাতে আর কখনো মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে সে কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
শরনার্থীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে গ্রামে আগুন দেয়ার পর এবং একাধিক হত্যাকাণ্ডের পর মানুষ দিগবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। ফলে অনেক পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। থ্যাংখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় শিবিরে রহমত উল্লাহর পরিবারের প্রায় সব সদস্য আসতে পারলেও তার এক বোন আসতে পারেননি। ৬০ বছর বয়সী রহমত উল্লাহ জানান, পক্ষঘাতগ্রস্ত তার এক মামার ঘরে আগুন দেয়ার পর গড়িয়ে কোনোমতে বাড়ির উঠোনে আসতে পারলেও এ সময় তাকে প্রথমে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করা হয়। বোনের অপেক্ষায় থাকা রহমত উল্লাহ কথা বলার সময় বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার বোনকে আর খুঁজে পাবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
তিনি জানান, তার মামার পরিবার মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামটিতে বেশ সম্পদশালী ছিল। ১৯৭৮ সালে যখন রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয় তখন তার নানা বাংলাদেশে এসেছিলেন। কিন্তু এরপর তাদের পরিবারের আর কেউ এদেশে আসেননি বলে জানান। তারা সেখানে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং ভালো ছিলেন। রহমত উল্লাহ বলেন এভাবে ধর্মের কারণে নিজ দেশের ভিটেমাটি ফেলে আসতে হবে, তা কখনো আমাদের মনে হয়নি।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, তারা যাতে আর কখনো তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে না পারেন এ কারণে গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। উখিয়ার তমব্রু সীমান্ত থেকে দেখা গেছে ওপারের গ্রামগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কারনে বড় গাছগুলো জ্বলে বিবর্ণ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে দূরের এলাকা বুচিডং বা রথেডং থেকে যারা এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় পায়ে হেঁটে পাহাড় জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন; এ ধরনের পরিবারের অনেক শিশু না খেয়ে রাস্তায় মারা গেছে। আবার খাবার না পেয়ে লতাপাতা খেয়ে থেকেছেন। তমব্রু সীমান্তে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির একজন সদস্য জানান, ধানক্ষেতে শিশুর জন্মের মতো অমানবিক দৃশ্য তাদের দেখতে হয়েছে।
বেশির ভাগ রোহিঙ্গা পরিবারের কোনো কোনো সদস্য হত্যা, গুম বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে এক ধরনের মানসিক অসুস্থতার মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে শিশুদের উপর এর প্রভাব পড়েছে মারাত্মক। অনেক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরে যাবেন কি না এমন প্রশ্ন করলে সেখানে গেলে তাদের মেরে ফেলা হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
No comments:
Post a Comment