অধ্যায়-১২
ডেভিড বেনগুরিয়ানের বাড়ী। এমিলিয়ার কক্ষ।
একটি ড্রইং রুম, একটি বাথরুম ও একটি বেড রুম নিয়ে এমিলিয়ার
নিজস্ব জগত।
গ্রীসিও মেয়ে ভোনাস এই জগতে এমিলিয়ার একমাত্র সঙ্গী ও পরিচারিকা। পিতা ও
মাতা এখানে আসেন, কিন্তু সেটা কতকটা রুটিন সফরেরর মত। তেলআবিব
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এমিলিয়াকে তারা অবাধ বিচরণের সুযোগ দিয়েছেন।
রাত ৯ -৩০ মিনিট। বেশ গরম বাইরে। কিন্তু
সেন্ট্রালি ইয়ার কন্ডিশন্ড এ বাড়ীতে গরমের কোন চিহ্ন নেই। এমিলিয়া পড়ার
টেবিলে বসে। কিন্তু মন বসাতে পারল না বইতে। মন এলামেলো, বিশৃঙ্খল। শয্যায়
গিয়ে সে শুয়ে পড়ল। চোখ বুঝে সে মনকে ভাবনাহীন করতে চাইল। কিন্তু পারছে না
সে। খোঁচার মত বিঁধছে শুধু।
এমিলিয়ার মা ঘরে ঢুকলেন। মুহূর্তকাল
দাঁড়িয়ে তিনি একবার পড়ার টেবিল ও একবার শায়িতা এমিলিয়ার দিকে চাইলেন। তারপর
গিয়ে বসলেন এমিলিয়ার পাশে। তারপর ধীরে ধীরে তিনি এমিলিয়ার কপালে হাত রেখে
বললেন অসুখ করেনি তো মা? চমকে উঠল এমিলিয়া। নিজেকে সামলে নিল সে। নিজের
কপালে রাখা মায়ের হাতটি তুলে নিয়ে সে বলল, না মা অসুখ করেনি।
-এমন অসময়ে শুয়ে কেন তুমি? মায়ের কথায় তখন আশংকার সুর।
-ভালো লাগছে না কিছু, তাই শুয়ে আছি মা।
-এই ভাল না লাগাটাই তো অসুখ মা। তাছাড়া
বেশ কিছুদিন থেকে দেখছি তুমি বাইরে কোথাও তেমন বের হওনা ঘরেই শুয়ে থাক।
কিছুক্ষণ থামল এমিলিয়ার মা। বলল, না হয় গিয়ে একবার ইউরোপ ঘুরে এসো, এখন তো
তেমন পড়াশুনার চাপ নেই।
-না মা তোমরা কিছু ভেব না। আমি ভাল আছি। ঘরে বসে পড়ি? বেড়াতে তেমন ভালো লাগছে না। হাসিতে মুখ রাঙ্গিয়ে বলল এমিলিয়া।
-তাই ভালো মা। দিনকাল ভাল যাচ্ছে না। ঘরে বাইরে শত্রু আজ। শ্বাসরোধ করতে চাইছে আমাদের।
-আচ্ছা মা শান্তি কি্সবে না? আমরা শক্রকে বন্ধু বানাতে পারবো না?
-কেমন করে? শক্ররা যদি শক্রতা না ছাড়তে চায়?
-কিন্তু আমরা তো শক্রতা ছাড়ছি না?
-কেমন করে?
-যে সব আরব মুসলমানকে আমরা তাদের ঘরবাড়ী থেকে তাড়িয়েছি, তাদেরকে ফিরিয়ে এনে যথাযোগ্য অধিকার তাদের আমরা কেন দিচ্ছি না?
-যথাযোগ্য কি অধিকার মা?
-দেশের শাসন ও আইন প্রণয়নের অধিকার।
এমিলিয়ার মা হাসল। বলল, পাগল মেয়ে, ওদেরকে দেশের শাসন ও আইন প্রণয়নের অধিকার দিলে ইসরাইললের সন্তানরা দাঁড়াবে কোথায়?
-কেন, আমরা যেহেতু সংখ্যালঘিষ্ট, তাই সংখ্যালঘিষ্টের অধিকারই প্রাপ্য।
-কিন্তু জার্মানিতে সংখ্যালঘিষ্ট ইহুদীদের অবস্থার কথা তুমি কি জান না?
-জানি। কিন্তু তাই বলে আরব মুসলমানদেরকে হিটলারের আসনে বসাবার কি কোন যুক্তি আছে মা?
-নিশ্চয়। তুমি নিশ্চয় জান, মুসলমানদের
পয়গম্বর মোহাম্মদ কেমন করে ইহুদীদেরকে প্রথমে মদীনা, তারপর খায়বর, সর্বশেষ
তাদের আরব থেকে বিতাড়িত করেছিল।
-কিন্তু মা, নবী মোহাম্মদ কি বিনা কারণে
ইহুদীদের বহিস্কার করেছিলেন? ইসলামের নবীর সাথে তাদের সম্পাদিত চুক্তি
তিনবার ইহুদীরা ভংগ করেছে এবং বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এর পর তারা মদীনা থেকে
বহিস্কৃত হয় এবং খায়বরে আশ্রয় পায় কিন্তু খায়বরকে ঘাঁটি করে আবার তারা
ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার পথ অনুসরণ করল, এরপর তাদের আরব থেকে বিতাড়িত করা
ছাড়া উপায় ছিল কি?
-এমিলিয়ার মা আবার মুখ টিপে হাসল। বলল যে
কারণে নবী মোহাম্মদ ইহুদীদেরকে বিতাড়িত করেছিল, সে কারণে আমরা ও আরব
মুসলমানদের বিতাড়িত করেছি।
-কিন্তু মা উভয় স্থলে তো একরকম কার্যকারণ নেই।
নবী মোহাম্মদ পৌত্তলিকদের ধর্মান্তরিত করে
স্বাভাবিক ভাবেই মদীনা ও আরবের মালিক হয়েছিলেন, মালিকানা তিনি ইহুদীদের
কাছ থেকে কেড়ে নেননি। অন্যপক্ষ আমরা আরব মুসলমানদের বিতাড়িত করে তাদের দেশ
ফিলিস্তীনকে আমরা ইসরাইল রাষ্ট্র বানিয়েছি।
-তোমার কথা ঠিক এমি। কিন্তু আমাদের জাতির স্বার্থে এর প্রয়োজন ছিল এবং ভবিষ্যতে থাকবে।
-এক জাতির প্রয়োজনে অপর জাতির ধ্বংস সাধন কেমন সুবিচার মা?
-রূঢ় বাস্তবতার সাথে তোমাদের পরিচয় নেই মা, অবিচার সব সময় অবিচার নয়।
-কিন্তু মা, অন্যায় করে যাদের অধিকার হরণ
করা হল, তারা কি অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী
সা্যমুয়েল শার্লটক রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করে আমেরিকায় প্রতিপালিত হয়ে হঠাৎ উড়ে
এসে ইসরাইলের নিয়ামক হয়ে বসার অধিকার যদি পায়, তাহলে বংশ পরস্পরায়
বসবাসকারী আরব মুসলমানরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে তো এগিয়ে আসবেই।
-হাঁ, এটা তারা করছে।
-সুতরাং আমরা শান্তির আশা কেমন করে করতে পারি?
এমিলিয়ার মা কোন উত্তর দিল না। কিছুক্ষণ
গম্ভীর ভাবে থেকে পরে ধীরে ধীরে বলল সে, শান্তির সম্ভাবনা যে নেই প্রতিটি
ইসরাইলীই তা জানে, কৌশল আর শক্তির বলেই তারা এদেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে,
শক্তি ও কৌশলের আশ্রয় নিয়েই তাদেরকে টিকে থাকতে হবে। শুধু টিকে থাকাই নয়,
তাদের থাবাকে আরও মজবুত ও বিস্তৃত করতে হবে। মায়ের দিকে এমিলিয়া পলকহীন
দৃষ্টিতে চেয়েছিল। তার মায়ের কথা সেদিন ওসেয়ান কিং জাহাজে শোনা ইসরাইলী
মন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে। তাহলে প্রতিটি ইসরাইলীই কি আরব
ভূমিতে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর। আত্মরক্ষাকারী জাতি বলে
পরিচয় দানকারী ইসরাইলীদের একি বিভৎস সাম্রাজ্যবাদী রূপ। শিউরে উঠল
এমিলিয়া।
এমিলিয়ার গম্ভীর আত্মস্থ ভাবের দিকে চেয়ে
এমিলিয়ার মা হেসে বলল, ভালো যুক্তি শিখেছো এমি, তোমার আব্বা খুব খুশী হতেন
শুনলে। কিন্তু সেন্টিমেন্ট দিয়ে সবকিছু বিচার করলে ভুল করবে। জাতির বৃহত্তর
প্রয়োজন ও মঙ্গলের জন্য এমন অনেক কিছু করতে হয় যা নীতিশাস্ত্র অনুযায়ী
অবিচার আর অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ে।
এমিলিয়া বলল, এটাই যদি জাতীয় নীতি হয় মা,
তাহলে হিটলারকে দোষ দেয়া যায় কেমন করে? নুরেনবার্গ বিচারের প্রহসনই বা
তাহলে করা হলো কেন? জার্মান জাতির পরম সুহৃদ নাজিদেরকে অমানুষিক নির্যাতন
আর শাস্তিরই বা শিকার হতে হল কেন?
-জাতীয় দায়িত্ব যখন কাঁধে আসবে, তখনই সব বুঝতে পাবে মা। বলে উঠে দাঁড়াল এমিলিয়ার মা। বলল, তাড়াতাড়ি খেতে এস।
এমিলিয়ার মা চলে গেল।
রাত ১১ টা। নাইটগাউন পরার জন্য এমিলিয়া ডেসিং রুমে ঢুকেছে। হঠাৎ ঘরের মেঝেয় কিছু পতনের শব্দ শুনতে পেল সে।
পার্টিশন ডোরে মুখ বাড়াল এমিলিয়া, মেঝেয় দাঁড়িয়ে আছে মাহমুদ। চোখাচোখি হয়ে গেল। মাহমুদের মুখে এক টুকরো হাসি।
এমিলিয়া প্রথমে বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। বিমূঢ় ভাব কেটে যেতেই তার মুখ রাঙ্গা হয়ে উঠল। সে চোখ নামিয়ে নিল।
মাহমুদ ধীরে ধীরে এগুলো এমিলিয়ার দিকে। একেবারে মুখোমুখি দাঁড়ালো এসে। বললো, কেমন আছ এমি?
কোন উত্তর দিল না এমিলিয়া। চলবার ও কথা বলবার শক্তি যেন সে হারিয়ে ফেলেছে।
কথা বলল মাহমুদ, রাগ করেছ বুঝি তুমি?
মুখ তুলল এবার এমিলিয়া। দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল দু’গন্ড বেয়ে তার।
-তুমি কাঁদছ এমি? নীরব অশ্রুর ঢল নেমেছে তখন তার দু’চোখে।
-তুমি কোথায় ছিলে? চকিতে মুখ তুলে প্রশ্ন করল এমিলিয়া।
-তেলআবিবেই ছিলাম।
-এখানেই ছিলে? একটু থামল এমিলিয়া। ঢোক গিলে বলল সে, আমি মনে করেছিলাম, অন্তত আমার জন্মদিনে তুমি আসবেই।
-তুমি পথ চাইবে আমি জানতাম। কিন্তু আসিনি আমি।
-আসনি কেন?
-তোমাদের গোয়েন্দারা সেদিন সারারাত আমার জন্য অপেক্ষা করেছে তোমাদের বাড়ীর চারদিকে।
চমকে উঠে মুখ তুলল এমিলিয়া। তার চোখে
বিস্ময়। মাহমুদ বলল, বিস্মিত হবার কিছু নেই। সেই রাতের ঘটনার পর থেকে
‘সিনবেথ’ গোয়েন্দারা তোমার উপর চোখ রেখেছে আমাকে ধরার জন্য। তারা নিশ্চিত
ছিল, জন্মদিনে আমি আসছিই।
-ওরা তাহলে সন্দেহ করছে আমাকে?
-সন্দেহ নাও হতে পারে। হতে পারে ওরা নিশ্চিত হতে চেয়েছিল। তোমার জন্মদিনের পর ওরা কিন্তু আর তোমাদের বাড়ীতে পাহারায় আসছে না।
-তুমি এসে ফিরে গিয়েছিলে।
-না এমি, পা বাড়ালে আমি আসতামই। তোমাদের
গোয়ান্দারা আমার পথ রোধ করতে পারত না। কিন্তু আমি চাইনি অপ্রীতিকর কিছু
ঘটুক চেয়েছি, কোন সন্দেহই যাতে তোমাকে স্পর্শ না করে।
-কোন পথ না পেয়ে শেষে আমাদের বাড়ীতেই
পাহারা বসাতে হল। এমন অসহায় যে ইসরাইল গোয়েন্দা বাহিনী আমি ধারণা করিনি
কোনদিন। বলে এমিলিয়া মৃদু হেসে বলল, তোমাকে বসতে বলিনি পর্যন্ত। বসবে চল।
মাহমুদ সোফায় গিয়ে বসল। সোফার উপর কনুই
দু’টি ঠেস দিয়ে সোফার পিছনে দাঁড়াল এমিলিয়া। মাহমুদের মাথা এমিলিয়ার গায়ে
অনেকটা যেন ঠেস দিল। মাহমুদ মাথাটা একটু সরিয়ে নিল।
-জানো, একটা সুখবর দিতে পারি। বলল এমিলিয়া।
-কি সুখবর? বলল মাহমুদ।
-বলব না। আগে বল বিনিময় কি হবে?
মাহমুদ বলল, কেমন সুখবর না শুনলে কেমন পুরস্কারের যোগ্য হবে কি করে বুঝব?
-কেন বলতে পার না, যা চাইবে তাই।
-বেশ যা চইবে, তাই।
এমিলিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তার
দু’হাতের আঙ্গুলগুলো তখন মাহমুদের জামার কলার নিয়ে খেলা করছিল। সে ধীরে
ধীরে বলল, জানো, সেদিন আমি গাজায় গিয়েছিলাম। ওখানকার মোহামেহডান বুক ষ্টোর
থেকেঃ Towards understanding Islam, Rights of non Muslim in Islamic
State, Islam in Theory and Practice – বই তিনটি কিনে এনেছি। এর মধ্যে
Towards understanding islam বইটি শেষ করে ফেলেছি। Islam in Theory and
Practice বইটি পড়তে শুরু করেছি। মাহমুদের প্রতি ধমনিতে, প্রতিটি রক্ত
কণিকায় আনন্দের স্রোত বয়ে গেল। আল্লাহ তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন।
মাহমুদ বলল, Towards understanding Islam ইসলামকে জানার জন্য প্রাথমিক
স্তরের একখানা অতি উৎকৃষ্ট বই, কেমন লাগল এমি?
-বারে! ভুলে যাচ্ছ কেন? আগে আমার পুরস্কার পরে তোমার প্রশ্নের উত্তর।
-কি চাও বল। মাহমুদ বলল হেসে।
-চাইব না, তুমিই বল, কি দেবে তুমি।
-তোমার ঐ খবর আমাকে যতখানি খুশী করেছে,
তার কোন তুলনা আমার জীবনে নেই এমি। তোমার একটি প্রাপ্যের কথাই আমার মনে
পড়ছে। কিন্তু এ বই সামান্য।
এমিলিয়ার শুভ্র গন্ডে এক ঝকল রক্তিম স্রোত
বয়ে গেল। বলল সে বলই না শুনি? মাহমুদ এমিলিয়ার দু’টি হাত তুলে নিল হাতে।
ধীর গম্ভীর স্বরে বলল, ইসরাইল রাষ্টের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ইসরাইলের
এককালীন প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্ব ইহুদীবাদের নেতৃস্থানীয় মস্তিস্ক ডেভিড
বেনগুরিয়ানের একমাত্র নাতনি এমিলিয়া তুমি। তুমি কি সব ত্যাগ করে গোঁড়া
মুসলিম মাহমুদকে নিয়ে সুখী হতে পারবে।
এমিলিয়া কোন উত্তর দিল না। দু’ হাতে মুখ ঢেকে কপালটা এলিয়ে দিয়েছে সোফার উপর।
মাহমুদ একটু ঘাড় ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করল কই, উত্তর দিলে না? তার ঠোঁটের কোণায় হাসি।
-ইস আবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। দিবার কথা তুমি দিয়েছ। যে নিয়েছে সে রাখুক বা ফেলে দিক তোমার কি।
-আমার কিছু নয়, কিন্তু acknowledgementবলতে একটি জিনিস আছে? হাসল মাহমুদ।
-না, তুমি নিষ্ঠুরের মত ডুব মেরে থাক,
কিছু পাবে না তুমি। বলে সরে যচ্ছিল এমিলিয়া। একটি হাত ধরে তাকে আটকিয়ে তার
দিকে পরিপূর্ণ দু’টি চোখ তুলে ধরে মাহমুদ বলল, একটি কঠিন জীবন তুমি বেছে
নিলে এমিলিয়া। লেহিহান অগ্নিশিখার উপর দিয়ে আমাদের চলার পথ। পথের শেষ কোথায়
আমরা জানি না। এমিলিয়া মাহমুদের কাছে একটু সরে আসল। কয়েক মুহূর্তের জন্য
তার চোখ দুটি বন্ধ হয়ে এল। তারপর চোখ খুলে সে বলল, আজ থেকে এমিলিয়াকে
তোমাদের একজন বলে মনে করো মাহমুদ। সুখে দুঃখে তাকে তোমরা তোমাদের পাশেই
পাবে।
মাহমুদ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, এটাই
তোমার কছে এই মুহূর্তে চাইছিলাম এমিলিয়া। বলে একটু থামল মাহমুদ। তারপর
বলল, ফেরাউনী আর শাদ্দাদী শাসনের কবলে পড়ে গোটা পৃথিবী আজ যন্ত্রণায়
কাতরাচ্ছে। এই অবস্থায় প্রতিটি মুসলামানের উপর এসেছে দুর্বহ দায়িত্ব। আমি
দোয়া করি মুসলিম মিল্লাতের একজন হিসাবে আল্লাহ তোমাকে তোমার দায়িত্ব পালনের
তওফিক দিন।
-জানো, আজ মার সাথে অনেক তর্ক হলো।
-কি নিয়ে?
-ইসরাইল আরব সমস্যা নিয়ে।
-তুমি বুঝি আরব মুসলমানদের পক্ষ নিয়েছিলে?
-আমি ন্যায়ের পক্ষ নিয়েছিলাম। আমি
বলেছিলাম, স্যামুয়েল শার্লটক রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করে এবং আমেরিকায়
প্রতিপালিত হয়ে যদি ইসাইলের নিয়ামক হতে পারেন, তাহলে আরব মুসলমানরা
ইসরাইলের শাসন ও আইন প্রণয়নের অধিকার পাবে না কেন?
-সুন্দর তোমার যুক্তি। তোমার মা কি বলেছিলেন?
-তিনি বলছিলেন, জাতির প্রয়োজনে অবিচার
জুলুম সব সময় অন্যায় নয়। আমি বলেছিলাম, তাহলে হিটলার আর নাজিদেরকে আমরা দোষ
দিতে পারব কোন দিক দিয়ে।
মাহমুদ এমিলিয়ার চোখে চোখ রেখেছিল। তার চোখ বিস্ময় -আনন্দে নাচছে।
এমিলিয়ার মুখ আরক্ত হয়ে উঠল। সে বলল, অমন করে চেয়ে থাকলে কিছু বলব না আমি।
মাহমুদ হেসে এমিলিয়ার গালে টোকা দিয়ে বলল,
তুমি শুধু সুন্দরই নও এমি, তোমার যুক্তিগুলো আরও সুন্দর। ফিলিস্তিনীদের
পক্ষ থেকে এমন করে এ সত্য কথাগুলো ইসরাইলীদের কানে কেউ কখনও তুলে দিতে
পারেনি।
-যাও, আর কোন কথা বলব না। বলে এমিলিয়া
ছুটে পালাল তার শোবার ঘরে। কিছুক্ষণ পরে এমিলিয়া প্লেটে করে মিষ্টি ও ফল
অন্য হাতে এক গ্লাস পানি নিয়ে ফিরে এল। মাহমুদ বলল, রাত দুপুরে একি করছ
এমি?
-কি করব সময়ে যে তোমাকে পাই না?
-সে আমার দোষ বটে।
-দোষ তোমার নয়, আমার ভাগ্যের।
-তা বটে, তানা হলে একজন নিশাচর মানুষ ভাগ্যে জুটবে কেন?
-অতএব কোন আপত্তি তো আর চলে না। হাসল এমিলিয়া।
টেবিলে প্লেট সাজিয়ে মাহমুদের সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল, নাও আর দেরি নয়।
মাহমুদ বলল, জানি আপত্তি চলবে না। কিন্তু
তোমাকেও বসতে হবে এমি। খাবার প্লেট শেষ করল দু’জনে। খাবার প্লেট সরিয়ে রেখে
মাহমুদের পাশে বসল এমিলিয়া। বলল, আচ্ছা মাহমুদ, আমি পড়েছি, বিশ্বব্যাপী
প্রতিষ্ঠা ইসলামের চূড়ান্ত লক্ষ্য; সুতরাং ইসলাম চরিত্রগত ভাবে সম্প্রসারণ
মুখী। ইসলামের এই বৈশিষ্ট্যের সাথে সাম্রাজ্যবাদের পার্থক্য কোনখানে?
মাহমুদ বলল, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ
হাসিলই সাম্রাজ্যবাদের মূল লক্ষ্য। বিজিত জাতির উপর বিজয়ী জাতির রাজনৈতিক ও
অর্থনৈতিক প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠাই সাম্রাজ্যবাদের একমাত্র কাম্য বিষয়। অন্য
পক্ষে ইসলাম এক মতাদর্শের নাম। যেহেতু বিশ্বের মানুষের জন্য বিশ্বস্রষ্ঠার
এটা মনোনীত জীবন বিধান, তাই বিশ্বের মানুষের সার্বিক কল্যাণ এর মধ্যেই
নিহিত। সুতরাং বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা এর চূড়ান্ত লক্ষ্য। বিশ্বব্যাপী
প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সে সানুষের কল্যাণ করতে চায় এক জাতির স্বার্থোদ্ধার বা
অন্য জাতির ক্ষতি সাধন করা তার লক্ষ্য নয়। মুসলমান কখনও তার ব্যক্তিগত শাসন
প্রতিষ্ঠা কিংবা মানুষকে নিজের গোলামে পরিণত করা এবং তাদের কঠোর শ্রমলব্ধ
অর্থ অবৈধভাবে কেড়ে নিয়ে দুনিয়ার বুকে নিজের স্বর্গ সুখ রচনার জন্য যুদ্ধ
করেনা আর মুসলমান হিসেবে এ সবের জন্যে সে সংগ্রাম ও করতে পারেনা। দুনিয়ার
কোন প্রান্তের কোন দেশের বা কোন জাতির কে এসে শাসন ক্ষমতায় বসলো, তা নিয়েও
কোন মাথা ব্যাথা ইসলামের নেই। ইসলাম শুধু দেখে, সে মংগলের ধর্ম ইসলামের
অনুসারী কি না। বিজয়ী ও বিজেতা বলে মানুষের মধ্যে কোন বিভেদের দেয়াল তুলে
দেয় না ইসলাম। মুসলমানরা যখন তাদের সংগ্রামে জয় লাভ করে, রাষ্ট্র ক্ষমতার
মালিক হয়, তখন মুসলিম শাসদের উপর এক বিরাট দায়িত্ব এসে চেপে বসে। এর ফলে ঐ
বেচারাদের রাতের ঘুম ও দিনের আরাম পর্যন্ত হারাম হয়ে যায়। ইসলামী রাষ্ট্রের
শাসকের চাইতে বাজারের একজন নগণ্য দোকানদারের অবস্থা অনেক ভালো হয়ে থাকে।
সে দিনের বেলা খলীফা বা শাসকের চাইতে বেশী উপর্জন করে এবং রাতের বেলা
নিশ্চিন্তে আরামে ঘুমাতে পারে। কিন্তু খলীফা বেচারা না তার সমান উপার্জন
করার সুযোগ পায় আর না পায় রাতের বেলায় নিশ্চিন্তে ঘুমানোর অবসর। দৃশ্যতঃ
সাম্রাজ্যবাদও দেশ জয় করে, কিন্তু উভয়ের প্রকৃতিতে আসমান জমিন পার্থক্য
বিদ্যমান।
মাহমুদের কথাগুলো যেন এমিলিয়া গোগ্রাসে গিলছিল। বলল সে, কিন্তু এমন কল্যাণ রাষ্ট্রের নমুনা আজ কোথায় মাহমুদ?
এর হুবহু নমুনা কোথাও হয়েতো খুঁজে পাবে না
এমি। মুসলমানদের আদর্শ বিচ্যুতিই এর কারণ। এই আদর্শ বিচ্যুতির ফলে শুধু
কল্যাণ রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটেছে তাই নয়, নির্যাতন আর গোলামীর শৃংখল নেমে
এসেছে মুসলমানদের মাথায়। কয়েক লক্ষ ইসরাইলীর হাতে আমরা মার খাচ্ছি।
তুর্কিস্তান ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আমরা গোলামী করছি অন্য জাতির।
আবিসিনিয়া ও স্পেন থেকে আমাদের অস্তিত্ব মুছে গেছে। আল্লাহ যে মুসলমানদেরকে
বিশ্বের মানুষকে পথ দোখানোর দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন, সেই মুসলমানরা আজ চোখ
বন্ধ করে অন্যের দেখানো পথে চলছে। আবেগ উত্তেজনায় মাহমুদের কণ্ঠ যেন বুজে
আসল। থামল সে। আবার বলল, আমরা এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য কাজ করছি এমি।
সাইমুমের হাজার হাজার মুসলিম তরুণ এ পথে জীবন দিতে প্রস্তুত। আমরা শুধু
ফিলিস্তিনের মুক্তি নয়, মুসলমানদেরকে পুনগঠিত পুনর্জাগরিত করে তাদের উপর
থেকে নির্যাতন আর গোলামীর অবসান ঘটাতে চাই ¬- প্রতিষ্ঠিত করতে চাই কল্যাণ
রাষ্ট্র। থামল মাহমুদ।
এমিলিয়াও নীরব। সেও ভাবছে। কিছুক্ষণ পরে
সে বলল, মতাদর্শ হিসাবে কম্যুনিজমও আন্তর্জাতিক চরিত্রের। সুতরাং ইসলামের
সাথে তো সংঘর্ষ তার অবশ্যম্ভাবী?
মাহমুদ হেসে বলল, দৃশ্যত তা বোঝায় কিন্তু
কম্যুনিজমের উপর দিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে যে পরিবর্তনের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে, তাতে
কম্যুনিজম রূপ নিতে যাচ্ছে পুঁজিবাদে। হেগেল থেকে মার্কস, মার্কস থেকে
লেনিন, লেনিন থেকে ষ্টালিন, তারপর বর্তমান রাশিয়ার ঘটনা পরস্পরের বিচার
করলেই তা বুঝতে পাবে। চীনও এ পথই ধরেছে। সুতরাং আপাতত কিছু সংঘর্ষ হলেও
কম্যুনিজম ইসলামের সাথে প্রতিযোগিতার যোগ্য নয় মোটেই।
-কিন্তু পরিবর্তন তো ইসলামেরও এসেছে। বলল এমিলিয়া।
-না এমি, পরিবর্তন ইসলামের নয়, পরিবর্তন
এসেছে মুসলমানদের আচার আচরণে। কম্যুনিজমের নির্মাতা মানুষ, মানুষ তার
পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু ইসলাম মানুষের উদ্ভাবিত নয়, সুতরাং কোন মানুষ
তার পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। আরও পড়াশুনা কর এমি, বুঝতে পারবে সব। মাহমুদ
থামল।
মাথা নত করে চুপ করে বসে ছিল এমিলিয়া।
মাথা তুলল সে। মাথা তুলতেই মাহমুদের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। আবার চোখ
নামিয়ে নিল এমিলিয়া। মুখ তার রাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বিজলী বাতির আলো রাঙ্গা
মুখকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। মাহমুদ বলল, তোমার সুন্দর ঐ মুখ মনকে স্বপনের
জাগতে নিয়ে যায়, কিন্তু তোমার মনের সত্যানুসন্ধিৎসা আবার ফিরিয়ে আনে মনকে
বাস্তব জগতে। স্বপ্ন আর বাস্তবের সমাহারে তুমি অপরূপ এমি।
এমিলিয়া দু’হাতে মুখ ঢেকে বলল, যাও,
মানুষকে খুব লজ্জা দিতে পার। মাহমুদ হেসে বলল, যাবার সময় হল এমি। এবার
সত্যিই উঠতে হবে। এমিলিয়া বলল, বারে। তোমাকে বুঝি আমি যেতে বললাম?
-না বললেও যেতে হবে।
-কিন্তু এত তাড়াতাড়ি?
-রাত এখন বারটা। ওরা খুব ভাববে।
-ওরা কারা?
-আমার সহকর্মীরা।
-তুমি এখনে এসেছ ওরা জানে?
-হাঁ জানে। আমরা কিছু গোপন করতে পারি না এমি? প্রথম দিনই আমি এ বিষয়টি আমাদের হেড কোয়ার্টারে আমাদের অধিনায়ক আহমদ মুসাকে জানিয়েছি।
-তিনি কি বলেছেন। অধীর কন্ঠে বলল এমি।
-তিনি বলেছেন, তুমি মুসলমান – একথা স্মরণ
রেখে পথ চললে কোন কাজেই তোমার ভুল হবে না। থামল মাহমুদ। আবার বলল, ইসলামের
প্রতি তোমার অনুরক্তির কথা শুনালে তিনি খুব খুশী হবেন।
-এ কথাও জানাবে বুঝি?
-নিশ্চয়।
-আচ্ছা তোমার সংগঠন যদি তোমাকে আমার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিত?
-সংগঠন দ্বিমত পোষণ করতে পারে বা জাতির
কোন ক্ষতি হতে পারে, এমন কোন সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি না, একথা আমি যেমন
জানি, আমার সংগঠনও তেমনি জানে।
-আচ্ছা ধর, এমন সিদ্ধান্ত যদি নিতো।
-আমি সংগঠনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতাম।
-এমন নিষ্ঠুর হতে পারতে? কষ্ট হত না?
-হয়তো হতো, কিন্তু জ্ঞান ও কর্তব্যের নির্দেশ সবচেয়ে বড়।
এমিলিয়া হাসল। বলল, ভাগ্যবতী আমি তাই না?
মাহমুদ বলল, তুমি ভাগ্যবতী কিনা জানি না।
কিন্তু আমার যাযাবর জীবনে তোমাকে পেয়েছি এক স্নিগ্ধ আলোর মতো। যখন ক্লান্ত
হয়ে পড়ি, যখন দেহমন শান্তির সন্ধানে উন্মুখ হয়, তখন তোমার স্মরণ আমাকে
শান্তি দেয় এমি। দেহ মনকে সজীব করে নতুন শক্তিতে।
এমিলিয়া একটুক্ষণ চুপ করে থেকে ধীরে ধীরে
বলল, আমি তোমার ঠিকানা জানতে চাই না, জিজ্ঞাসাও করব না তোমাকে কোথায় পাব।
কিন্তু কথা দাও, তুমি মাঝে মাঝে দেখা দিয়ে যাবে। জানি তুমি ব্যস্ত। কাজ
তোমাদের গুরুত্বপূর্ণ, তবু আমার অনুরোধ, উদ্বেগ যাতনায় জর্জরিত একটি হৃদয়ের
শান্তনার জন্য তুমি আসবে।
-সময় পেলেই আমি আসব এমি। বলে থামল, তারপর বলল, আমার এবার যে উঠতে হয়।
-এমিলিয়া বলল, আর একটি কথা। ক্লাবে
রেস্তোরায় আর যাই না। ইউনিভার্সিটির পড়াতেও মন বসাতে পারেছি না। শত চেষ্টা
করেও মনকে ফিরিয়ে রাখতে পারি না তোমার চিন্তা থেকে। তুমি আমাকে কোন কাজ
দাও, তোমার দেওয়া কাজ করে হয়তো হৃদয়ে শান্তি পাব।
মাহমুদ চিন্তা করল। বলল তারপর, তোমার
সাহায্য পেলে আমরা সুখী হব এমি। কিন্তু হেড কোয়ার্টারের সাথে পরামর্শ না
করে কোন কাজ আমি তোমাকে দিতে পারি না। থামল একটু তারপর আবার বলল মাহমুদ,
তুমি মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছ এমি?
-কি মনে কর তুমি?
-ক্লাবে রেস্তেরায় যাওয়ার মত নির্লজ্জতাও যখন ছেড়ে দিয়েছ, তখন মদ তুমি খেতে পার না।
-হাঁ, তোমার সাথে বল নাচের সেই রাত থেকেই মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি মাহমুদ।
মাহমুদের মুগ্ধ ও আনন্দোজ্জ্বল চোখ দু’টি
পলকহীন দৃষ্টিতে এমিলিয়ার মুখের দিকে চেয়েছিল। ধীরে ধীরে সে এমিলিয়ার একটি
হাত তুলে নিতে গেল।
মাহমুদের সেই দৃষ্টির সামনে গোটা দেহ যেন
রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল এমিলিয়ার। একটা অপরাধী স্পর্শ যেন তার গোটা দেহ অবশ করে
দিচ্ছে। চোখ দু’টি বুজে এল তার। কাঁপছে যেন সে।
কিন্তু মাহমুদ সচেতন হল। মন তার স্বীকার
করল, সীমা লংঘন করেছে সে। এমিলিয়ার হাত স্পর্শ না করে হাত টেনে নিয়ে বলল,
না এমি, আমরা সীমা লংঘন করছি, আসি আজ।
চমকে উঠল এমিলিয়া। চোখ খুলল সে। মুক তার
আরক্ত হয়ে উঠল, বলল, সত্যি বলেছ মাহমুদ। সাবধান হব আমরা ভবিষ্যতে। জানালার
কাছে এসে দাঁড়াল মাহমুদ। বাইরে নিকষ কালো অন্ধকার। জানালা দিয়ে নীচে তাকিয়ে
আঁতকে উঠল এমিলিয়া। এই অন্ধকারে নামবে কেমন করে? তার কন্ঠে উৎকণ্ঠা।
মাহমুদ হাসল। বলল, ভেব না এমি। আমার অভ্যেস আছে্ দোয়া করো। আসি। খোদা হাফেজ।
-এসো, খোদা হাফেজ। হাসতে চেষ্টা করল, ঠোঁট
কাপল শুধু। জানালা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল মাহমুদ। অন্ধকারে মাহমুদকে আর
দেখা গেল না। এমিলিয়া দাঁড়িয়ে রইল ঐ খানে তেমনি ভাবে। চারিদিক নীরব। গোটা
তেলআবিব যেন ঘুমাচ্ছে। বড় একা বোধ করল এমিলিয়া। জানালা থেকে সরে এল সে।
মাহমুদের উপস্থিতির উষ্ণতা এমিলিয়া সব জায়গায় অনুভব করছে। এমিলিয়া সোফায়
গিয়ে গা এলিয়ে দিল। হঠাৎ টি পয়ের উপর মাহমুদের একটি রুমাল চোখে পড়ল
এমিলিয়ার। রুমালটি তুলে নিয়ে মুখে চেপে ধরল এমিলিয়া। দু’টি চোখ বুঁজে এল
তার।
অন্যান্য অধ্যায় পড়তে......
অধ্যায়-৬
অধ্যায়-৪
No comments:
Post a Comment