অপারেশন তেলআবিব-২ অধ্যায়-৮ Saimum Series - 2


অধ্যায়-৮
মার্চ। সাইমুমের অভ্যূত্থানের পর ১১ দিন পার হয়ে গেছে। এই ১১ দিনে ওলট পালট হয়ে গেছে ইসরাইলের চেহারা। দুযুগেরও বেশী আগে যে সব ফিলিস্তিনি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল, তারা সকলেই ফিরে এসেছে দেশে। সাইমুমের এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন স্কোয়াড নতুন প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। অফিস-আদালত কল-কারখানায় এবং কৃষিক্ষেত্রে
ফিলিস্তিনের আদি ইহুদী বাসিন্দাদের অধিকারে কোন হস্তক্ষেপ করা হয়নি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর যেসব ইহুদী ফিলিস্তিনে এসেছে, তাদেরকে অফিস-আদালত কল-কারখানা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনে অবাঞ্ছিত বহিরাগত হিসেবে তাদের গণ্য করা হয়েছে। ইলাতের নিকটবর্তী দুর্গম পার্বত্য এলাকার আশ্রয় শিবিরে ইসরাইলের পাঁচ লক্ষ সামরিক, আধাসামরিক উগ্র যুবশক্তিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সাইমুম এদের কে জিম্মি হিসেবে রেখেছে। ফিলিস্তিনের জাতীয় সরকারের ওপর বাইরের ইহুদী মুরব্বীদের প্ররোচনায় বাইরে থেকে কোন আঘাত এলে এদের ওপর আঘাত হানা হবে। বিদেশী ইহুদী মুরুব্বীদের ষড়যন্ত্রের পাল্টা উত্তর হিসেবে এদের কে ব্যবহার করবে সাইমুম।
এই ১১ দিনে সাইমুম ফিলিস্তিন জাতীয় সরকারের সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছে। সাইমুমের কর্মীসেনাসহ ফিলিস্তিনের পাঁচ লক্ষ মুসলিম যুবককে নিয়ে সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছে। ফিলিস্তিনকে একটি অস্ত্রাগারে পরিণত করেছিল ইসরাইলিরা। সুতরাং অস্ত্রের অভাব হয়নি। সউদি আরব, জর্দান লিবিয়ার বিমান বাহিনী নৌ-বাহিনীর অফিসার ক্রুদের সঙ্গোপনে ফিলিস্তিনে আনা হয়েছে।
তারা ফিলিস্তিন জাতীয় সরকারের বিমান নৌ-বাহিনীকে র্পূণ কর্মক্ষম করে তুলেছে। মিসর, পাকিস্তান ইরান থেকে আণবিক বিশেষজ্ঞদের আণবিক গবেষণা পরীক্ষা কেন্দ্র নেগিও মরুভূমির ডেমনায় আনা হলো।
আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হবার পর অফিস-আদালত কল-কারখানার কাজ শুরু করা হলো।
এরও দিন পর ডেমনার ১১টি আণবিক বোমাকে ব্যবহারোপযোগী করে তোলা হল এবং মূহূর্তের নোটিশে তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে এমন প্রস্তুতি সম্পন্ন হবার পর বিমান নৌ-বন্দর খুলে দেয়া হলো। কিন্তু অনুসৃত আভ্যন্তরীণ নীতি সম্পর্কে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হলো। প্রচার নয়, দ্রুত কাজ-এই নীতি গ্রহণ করল সাইমুম নিয়ন্ত্রিত নতুন জাতীয় সরকার। ঘটনা প্রবাহের স্বাভাবিক বিকাশের ফলে যেটুকু প্রকাশ পায়, তার বেশী কিছু প্রকাশ করতে চায় না সরকার।
অভ্যুত্থানের দিন সাতেক পর চীন ফ্রান্সসহ অধিকাংশ আফ্রিকা, এশিয়া পশ্চিম ইউরোপীয় দেশের স্বীকৃতি পাওয়া গেল। তবে মুসলিম দেশগুলো বোধগম্য কারণেই ফিলিস্তিনে জাতীয় সরকার সম্পর্কে কঠোর নীরবতা পালন করছে। তাদের এই নীরবতার ফলে ফিলিস্তিন বিপ্লবের সঠিক প্রকৃতি সম্পর্কে মুসলমানদের চিহ্নিত শত্রুরা কিছু আঁচ করতে সমর্থ হলো না।
জাতিসংঘ মিশন বিদেশী সাংবাদিকদের রিপোর্ট থেকে ফিলিস্তিনের নতুন সরকার সম্পর্কে বাইরে যে ধারণা দাঁড়াল তা হল, ইসরাইলের নতুন সরকার একটি আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদী সরকার। ইহুদী, খৃস্টান মুসলমান সকলেই সেখানে সমান অধিকার লাভ করবে। ফিলিস্তিনের লক্ষ লক্ষ বাস্তুহারা মুসলমান তাদের পূর্বের বাস্তু-ভিটা ফিরে পাচ্ছে। অপরদিকে লক্ষ লক্ষ বহিরাগত ইহুদী তাদের নাগরিক অধিকার হারিয়ে উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছে।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো বিশ্বের রাজধানীগুলোতে। একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া আফ্রিকা এশিয়ার প্রত্যেকটি দেশ ফিলিস্তিন জাতীয় সরকারের নীতি সমর্থন করল। অভিনন্দিত হলো সরকার। এই সময় মুসলিম দেশগুলো প্রায় এক সাথে ফিলিস্তিন সরকারকে আনুষ্ঠনিকভাবে স্বীকৃতি জ্ঞাপন করল।
বৃটেন নতুন সরকারের সমালোচনা করল এবং নতুন ইহুদী উদ্বাস্তু সমস্যার দিকে জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সোভিয়েত ইউনিয়ন নীরবতা অবলম্বন করল। বোঝা গেল, কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছে সোভিয়েত সরকার। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ঘটল আমেরিকায়। ভীষণ হৈ চৈ শুরু হলো সেখানকার ইহুদী সার্কেলে। কিন্তু ফিলিস্তিনের নতুন সরকার প্রশ্নে মার্কিন সিনেট কংগ্রেস সিনেটের একটি শক্তিশালী গ্রুপ মার্কিন ইহুদীদের ইসরাইল নীতির তীব্র সমালোচনা করল। তারা পরিষ্কার ভাবে জানাল, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আর তারা ইহুদীদের হাতের পুতুল সাজতে দিবে না। ইহুদী স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আর তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহৃত হতে দিবে না।মার্কিন ইহুদীদের তারা আরও পরামর্শ দিল, হৈ চৈ করে ইহুদী উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান করা যাবে না। যেমন করে বিশ্ব ইহুদী মুরুব্বীরা ফিলিস্তিনে ইহুদী রপ্তানী করেছিল, ঠিক তেমনি ভাবেই উদ্বাস্তু ইহুদীদের সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা উচিত। অথবা ফিলিস্তিনি আরব মুসলমানদের সেই আবাসভূমিতে বিশ্বস্ত পড়শী সেজে বসবাস করার মানসিকতা ইহুদীদের সৃষ্টি করতে হবে
 এই সিরিজের অন্যান্য অধ্যায়....
অধ্যায়-১
অধ্যায়-৬

No comments: